No products in the cart.
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কফি না হলে দিনটাই যেন ঠিকভাবে শুরু হয় না, তাই না? আবার কাজের ফাঁকে এক কাপ চা আমাদের মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তোলে। এই দুটোর পেছনে যে জিনিসটা কাজ করে, তার নাম ক্যাফেইন। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টিমুল্যান্ট বা উদ্দীপক পদার্থ।
ক্যাফেইন আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কি আসলেই জানি, এই ক্যাফেইন জিনিসটা কী? এটা কীভাবে আমাদের শরীরে কাজ করে? এর কি শুধুই উপকার, নাকি কোনো ঝুঁকিও আছে?
চলুন, আজ ক্যাফেইনের দুনিয়ায় একটু ঘুরে আসি। দেখি, এর উপকারিতা কী, ঝুঁকি কতটা, আর আমাদের শরীরে এটি আসলে কীভাবে কাজ করে।
ক্যাফেইন হলো একটা প্রাকৃতিক রাসায়নিক, যা চা, কফি, কোকো বিনস আর কোলা নাটের মতো অনেক গাছে পাওয়া যায়। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে (central nervous system) উদ্দীপ্ত করে, যার ফলে আমরা সতেজ আর মনোযোগী অনুভব করি।
আমাদের মস্তিষ্কে অ্যাডেনোসিন (adenosine) নামে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা আমাদের ক্লান্ত করে তোলে আর ঘুম ঘুম ভাব এনে দেয়। ক্যাফেইন মস্তিষ্কে গিয়ে সেই অ্যাডেনোসিনের রিসেপ্টরগুলো ব্লক করে দেয়। ফলে অ্যাডেনোসিন তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না, আর আমাদের ঘুম ভাব কেটে যায়। তখন আমরা অনেক বেশি ফুরফুরে আর এনার্জেটিক অনুভব করি।
ক্যাফেইনের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো এটা আমাদের ঘুমভাব দূর করে সতেজ রাখে। তবে এর উপকারিতা এখানেই শেষ নয়। পরিমিত পরিমাণে নিলে ক্যাফেইন শরীরের জন্য আরও অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্ককে আরও সচল করে তোলে। এটা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ আর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অফিসের জরুরি কাজ হোক কিংবা পরীক্ষার পড়া, এক কাপ কফিই মনোযোগ ধরে রাখতে বড় সহায়ক হতে পারে।
অনেকেই ব্যায়াম করার আগে ব্ল্যাক কফি পান করেন। কারণ, ক্যাফেইন শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের শরীরকে শারীরিক পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত করে। এতে সহনশক্তি, পেশির শক্তি এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স উন্নত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন আমাদের মেটাবলিজম বা হজমশক্তি বাড়াতে পারে। মেটাবলিজম বাড়লে শরীর আরও বেশি ক্যালরি পোড়াতে পারে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক কফিতে ক্যালরি প্রায় শূন্য, তাই এটা ফিটনেস সচেতনদের জন্য দারুণ।
নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে ক্যাফেইন নেওয়া হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, পারকিনসনস রোগ এবং কিছু লিভারের সমস্যার ঝুঁকি কমে যেতে পারে। এছাড়াও, কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
সবকিছুতেই পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি। ক্যাফেইনের অনেক উপকারিতা থাকলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে নিলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
যে ক্যাফেইন আমাদের সতেজ রাখে, সেটাই ঘুমের শত্রু হতে পারে। বিশেষ করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় ক্যাফেইন গ্রহণ করলে রাতে ঘুম আসতে সমস্যা হতে পারে। এটা আমাদের স্বাভাবিক ঘুম চক্রকে নষ্ট করে দেয়।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে তোলে। এর ফলে উদ্বেগ, বুক ধড়ফড় করা, অস্থিরতা আর হাত কাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা আগে থেকেই অ্যাংজাইটিতে ভোগেন, তাদের জন্য এটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
খালি পেটে কফি খেলে অনেকেরই অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। ক্যাফেইন পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা থেকে বুক জ্বালাপোড়া বা হজমের গোলমাল হতে পারে।
নিয়মিত অনেক ক্যাফেইন নিলে শরীর এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। হঠাৎ ক্যাফেইন বন্ধ করলে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি আর খিটখিটে মেজাজের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করা নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এটা প্রায় ৪ কাপ কফি বা ১০ কাপ চায়ের সমান।
তবে, সবার শরীর একরকম নয়। কারও কারও শরীর ক্যাফেইনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারে। গর্ভবতী নারী, অ্যাংজাইটিতে ভোগা ব্যক্তি বা যাদের ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা উচিত।
এক কাপ কফি (৮ আউন্স): প্রায় ৯৫ মিলিগ্রাম
এক শট এসপ্রেসো: প্রায় ৬৪ মিলিগ্রাম
এক কাপ কালো চা (৮ আউন্স): প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম
এক কাপ সবুজ চা (৮ আউন্স): প্রায় ২৮ মিলিগ্রাম
এনার্জি ড্রিংকস: ৫০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত
ডার্ক চকোলেট: সামান্য পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে
ক্যাফেইন আমাদের জন্য বন্ধু না শত্রু, তা নির্ভর করে আমরা কীভাবে এটা গ্রহণ করছি তার ওপর। পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী হতে পারে। এটি আপনার সকালে সতেজ রাখে এবং ব্যায়ামের সময় শক্তি জোগায়।
কিন্তু ক্যাফেইনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া ঠিক নয়। নিজের শরীরের কথা শোনুন এবং আপনার জন্য সঠিক পরিমাণটা খুঁজে বের করুন। ক্যাফেইনের সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি করুন, যাতে এর উপকারিতা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন, কোনো ঝুঁকি ছাড়াই।
আপনার পরের কাপ কফি হোক জেনে-বুঝে এবং পরিমিত। সুখীভাবে কফি উপভোগ করুন!
আরও পড়ুন: কফি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।